Stories
একসময় যানজটে স্থবির ঢাকা শহরই ছিল সবুজের স্বর্গ। এই শহরই একসময় ধান চাষের জন্য বিখ্যাত ছিল। মিরপুর, কুর্মিটোলা, পল্টন এবং তেজগাঁও যেমন চারটা বনের নাম। সেখানে পাখি ছিল, ছিল আরও অনেক প্রাণী। তখন বুড়িগঙ্গাও ছিল স্বচ্ছ পানির নদী।
সে কবেকার কথা! এরপর মানুষ ধীরে ধীরে গাছ, প্রাণী আর পাখি ধ্বংস করে কেবল আবাসন করতে লাগল। যখন সব জায়গা দখল করা শেষ, তখন উল্লম্বভাবে বাড়তে লাগল দালানকোঠা। ঢেকে গেল আকাশ। এখন এই ঢাকা শহর ইট, পাথর আর কংক্রিটের।
সেই ক্রমবর্ধিত শহরের নির্মাণযজ্ঞ তো এখন চলছে। ইট-বালু-সুরকির ভার বাড়ছে ঢাকার বুকে। আর নির্মাণযজ্ঞ মানেই যান্ত্রিক কোলাহল। খোঁড়াখুঁড়ি আর নির্মাণ যন্ত্রপাতির বিরামহীন আওয়াজ। ইট-বালু-সিমেন্টের সেই রাজ্য তো ধুলোমলিন। এমন ধুলোমলিন নির্মাণাধীন প্রকল্পকে আড়াল করতে আমরা দেয়াল তুলতে দেখি। সে দেয়ালও কখনো ইট-সিমেন্টের কখনো বা ইস্পাতের। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সবুজের শান্ত ছোঁয়া রাখতে গ্রিন ফেনসিং বা সবুজ বেষ্টনীর প্রচলনও রয়েছে।
সহজ ভাষায় গ্রিন ফেনস হলো সবুজ বেষ্টনী। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, মেক্সিকো প্রভৃতি দেশে এই সবুজ দেয়াল ব্যাপক জনপ্রিয়। ভবনের নির্মাণকাজ আড়াল করতে ইট-সিমেন্টে বা ইস্পাতের নির্মিত দেয়ালের পরিবর্তে এটি তৈরি হয় গাছ দিয়ে। এই প্রচেষ্টা পরবর্তী সময়ে ল্যান্ডস্কেপিং ও ভবনের বিভিন্ন স্থানে বাগান তৈরির মাধ্যমে ভবন ও আশপাশেও প্রতিফলিত হয়।
স্থাপত্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভলিউমজিরোর মুখ্য স্থপতি মো. ফয়েজ উল্লাহ বলছিলেন, ‘গ্রিন ফেনস আমাদের দেশের জন্য নতুন হলেও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এটা তেমন নতুন কিছু নয়। গ্রিন ফেনস নির্মাণাধীন সাইটকে একটা ভিন্নমাত্রা দেয়। এই সৃজনশীল চিন্তার ফলে নির্মাণাধীন ভবনটি দেখতে আর একঘেয়ে লাগে না, বৈচিত্র্য আসে। এর ফলে সবুজের প্রতি মানুষের সচেতনতা বাড়ে।’
বছরখানেক আগে এমন একটি প্রকল্প শুরু করেছে র্যাংগ্স প্রপার্টিজ লিমিটেড। বিভিন্ন উদ্ভিদ দিয়ে এই বেষ্টনী তৈরি করা যায়। তবে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহার করেছে ফার্নগাছ। ঢাকার বনানীতে তাদের একটি নির্মাণাধীন প্রকল্পের দেয়াল দেখে মনে হয়েছিল ফার্নের বাগান। শুধু বনানীতেই নয়, প্রতিষ্ঠানটি রাজধানীর গুলশান, বসুন্ধরা ও ধানমন্ডির নির্মাণাধীন প্রকল্পেও এমন সবুজের সমারোহ ঘটিয়েছে।
এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন স্থপতির সঙ্গেও কথা হয়েছিল উপকারিতা নিয়ে। তাঁদের কাছেই জানা গেল চারটি বিষয়। গ্রিন ফেনস নির্মাণাধীন প্রকল্পের দূষণ কমায় ও সৌন্দর্যবর্ধন করে। দ্বিতীয়ত, দেয়াল রং করতে হয় না। কারণ, এটি তো গাছের তৈরি। আর রং করার প্রয়োজনীয়তা নেই বলে রং থেকে বাতাসে ক্ষতিকর উপাদান নিঃসরণ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তৃতীয়ত, নির্মাণাধীন প্রকল্পের চেহারাই বদলে যায়। দারুণ নান্দনিক আর রুচিশীল দেখাবে প্রকল্পের স্থানটি। চতুর্থত, বায়ুদূষণের এই শহর থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে আর অক্সিজেন দিয়ে পরিবেশের দূষণ কমাবে। অল্পমাত্রায় হলেও কমাবে শব্দদূষণ। সর্বোপরি, বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা দূর করে মানুষকে মানসিকভাবে প্রশান্তি দেবে। আরও একটি সুবিধা হলো, পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করেই এটি রিসাইকেল করা সম্ভব। অর্থাৎ, নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর এই গ্রিন ফেনসিং তুলে নিয়ে অন্য কোনো প্রকল্পেও ব্যবহার করা যায়। এই গ্রিন ফেনসকে আবার বলা হচ্ছে ভার্টিক্যাল গার্ডেন বা উল্লম্ব বাগান।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী
অধ্যাপক শেখ আহসান উল্লাহ মজুমদারও বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তাঁর মতে, ‘উদ্যোগটা আমূল পরিবর্তন
সাধন করার মতো কিছু হয়তো নয়। তবে ভালো।’
সবুজায়নের এমন ছোট ছোট উদ্যোগেই তো সবুজ হবে প্রিয় রাজধানী।
215, Bir Uttam Mir Shawkat Sarak Road,
Tejgaon I/A, Dhaka-1208
096 17 123 123(Sales Hotline)
02 88 333 23 (Customer Service)
[email protected]
© Copyright 2020 - Rangs Properties Ltd